শিরোনাম

আকিকা ৭ম দিনে না করলে কি শুদ্ধ হবে?


ধর্ম ডেস্ক : ইসলাম শাশ্বত সত্য ধর্ম। এতে আছে জীবনের সকল সমস্যার সমাধান ও প্রতিটি কাজের বিধিবিধান। শিশুর জন্মের পর আকিকা দেওয়া ইসলামেরই একটি বিধান। প্রিয়নবী (স.) উম্মতকে নবজাতকের জন্য আকিকা দেওয়ার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন।

সন্তান ভূমিষ্ঠের সপ্তম দিন আকিকা করা উত্তম। তবে যদি কেউ কারণবশত সপ্তম দিনে না করতে পারে, তবে পরবর্তী সময়ে যেকোনো দিন আদায় করতে পারবে। সপ্তম দিন মনে রাখার একটি সহজ পদ্ধতি হলো, সপ্তাহের যে দিনটিতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে, যেমন—শুক্রবার, পরবর্তী সপ্তাহে ঠিক এর আগের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার আকিকা আদায় করলে তা সপ্তম দিনে পড়বে। (আবু দাউদ: ২৮৩৭)

যেকোনো দিন আকিকা করা জায়েজ হলেও ওলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা সুন্নত। কেননা, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করতে হয়, তার মাথা কামাতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। (তিরমিজি: ১৫২২)

সন্তানের আকিকা দেওয়ার প্রথম দায়িত্ব পিতার ওপর ন্যস্ত হয়। পিতার সামর্থ্য না থাকলে সে ক্ষেত্রে মা সামর্থ্যবান হলে তিনি অথবা তাঁদের পক্ষ থেকে দাদা-দাদি, নানা-নানি আকিকা আদায় করবেন। (আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ৩০/২৭৭)

আকিকার পশুর সংখ্যা কত হবে— এ নিয়ে নির্ভরযোগ্য মত হচ্ছে, ছেলেসন্তানের পক্ষ থেকে একই ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৩৬)

হজরত উম্মে কুরজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ছেলের জন্য এক ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের জন্য একটি বকরি আকিকা করবে।’ (আবু দাউদ: ২৮৩৪)

তবে, ছেলের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করলেও মোস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে। যদিও দুটি করা উত্তম। (রদ্দুল মুহতার: ৫/২১৩, আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ৩০/২৭৭)

যেসব জন্তু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হয় না, সেসব জন্তু দিয়ে আকিকাও শুদ্ধ হয় না। তাই আকিকার ক্ষেত্রে জন্তুর বয়স ও ধরনের দিক থেকে কোরবানির জন্তুর গুণ পাওয়া যায়, এমন জন্তুই নির্বাচন করতে হবে। (তিরমিজি: খ. ৪, পৃ-১০১)

কোনো কোনো অঞ্চলে একটি কুপ্রথা রয়েছে যে, যখন নবজাতকের মাথায় ক্ষুর বসানো হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে পশু জবাই করতে হবে—এ ধারণা সঠিক নয়। মাথা মুণ্ডানোর আগে-পরে যেকোনো সময় আকিকার পশু জবাই করা যাবে। হজরত আতা (রহ.)-এর এক বর্ণনা মতে, আকিকার পশু জবাই করার আগে মাথা মুণ্ডিয়ে নেওয়া উত্তম। (আল মুকাদ্দামাতুল মুমাহহাদাত: ১/৪৪৯)

আকিকার গোশতের হুকুম কোরবানির গোশতের মতোই। কাঁচা ও রান্না করা উভয়টিই বণ্টন করা যাবে। সর্বস্তরের লোক তা খেতে পারবে। এমনকি নিজের মা-বাবা, নানা-নানি, ধনী-গরিব সবাই নিশ্চিন্তে আকিকার গোশত খেতে পারবে। (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৩৬)

যেহেতু আকিকা করা হয় বালা-মসিবত দূর করার জন্য, তাই মৃত বাচ্চার পক্ষ থেকে আকিকা করা সুন্নত নয়। (আহসানুল ফতোয়া: ৭/৫৩৬)

উল্লেখ্য, অনেকে মনে করেন যে, কোনো কারণে সন্তানের নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে নতুন করে আকিকা দিতে হবে। না, এটি সঠিক নয়। বরং নবজাতক শিশুর একবার আকিকা করা মোস্তাহাব। নাম পরিবর্তন করলে নতুন করে আকিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১২/১৬৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবীজির সুন্নতের অনুসরণে সন্তানের আকিকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Check Also

ঈদে মিলাদুন্নবী কবে, জানা যাবে কাল

ধর্ম ডেস্ক : ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) কবে তা জানা যাবে আগামীকাল সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর)। পবিত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published.