পুনঃখননে প্রাণ ফিরেছে বগুড়া জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান করতোয়া নদীর। শহর, গ্রাম, ফসলি মাঠ পেরিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীটির বগুড়া অংশের ১২৩ কিলোমিটারের মধ্যে নির্ধারিত প্রায় ২৭ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এখন দৃশ্যমান নদীর প্রকৃত রূপ। একই সাথে শহর অংশের ৭৩০ মিটার স্লোপ প্রটেকশন, সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজও ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। জুনের আগেই পুরোপুরি নদীর পুনঃখনন এবং ওয়াকওয়ে ব্যবহার ও সৌন্দর্যবর্ধন উপভোগ করতে পারবেন বগুড়াবাসী, এমনটিই বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার শিবগঞ্জ, বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেরপুরের খানপুরে বাঙ্গালী নদীতে মিলিত হয়েছে করতোয়া নদীটি। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৩ কিলোমিটার। নদীটি দীর্ঘ সময় খনন না করা, ময়লা আবর্জনা ফেলা, অবৈধ দখল—দুষণ, কচুরীপানার বিস্তার সহ বিভিন্ন কারনে নদীটির বিভিন্ন অংশ সরু খালে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি ময়লার ভাগার এমনকি কোথাও কোথাও ফসল ফলাতেও দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রায় ৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় করতোয়া নদী পুনঃখনন ও ডান তীরে স্লোপ প্রটেকশন কাজ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে (করতোয়া নদী সংলগ্ন) গত বছরের ১৯ মার্চ এই প্রকল্পের ৭৩০ মিটার স্লোপ প্রটেকশন, সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম।
এ প্রকল্পে— বগুড়া শহরের এসপি ব্রীজ থেকে উত্তর দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত ৭৩০ মিটার স্লোপ প্রটেকশনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা কারাগার, জেলা প্রশাসকের বাংলো, বগুড়া মহিলা কলেজকে রক্ষা করা, ২৭ কিলোমিটার করতোয়া নদী পুনঃখননের মাধ্যমে বগুড়া জেলার অংশে করতোয়া নদী পুনরুজ্জীবিত করা, অগ্নি নির্বাপণে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, দখল—দূষণ থেকে করতোয়া নদীকে রক্ষা করা, ২৭ কিলোমিটার সুবিল খাল ও অটো খাল পুনঃখননের মাধ্যমে বন্যার পানি নিষ্কাশন সহ বিভিন্ন সুবিধার কথা বলা হয়েছে।
নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, পুনঃখননের পর নদীটির সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়েছে। আবর্জনা আর কচুরীপানার কারনে যে নদীর পানি দেখা যেত না, এখন তা দেখা যায়। ভরাট হয়ে থাকা নদীর বুকে দেখা যেত বিভিন্ন ফসল, এখন সেসব স্থানে পানি থৈ থৈ করছে। তবে নদীর শহর অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে বিশেষ করে দত্তবাড়ি ব্রীজ, কদমতলা ঘাট, ফতেহ আলী ব্রীজ এলাকা সহ বিভিন্ন পয়েন্টে আবারো কচুরীপানা ভরে গেছে। তাছাড়া ময়লা আবর্জনা, কল—কারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলায় নদীর পানি স্বাভাবিক নেই। পানি বিভিন্ন রং ধারণ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, প্রায় ৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে করতোয়া নদীর পুনঃখনন, শহর অংশে ৭৩০ মিটার স্লোপ প্রটেকশন, সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। করতোয়া নদীর ২৭ কিলোমিটারের মধ্যে ২৬ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ শেষ হয়েছে। শহরের ভাটকান্দি ব্রীজ এলাকায় অবশিষ্ট প্রায় ১ কিলোমিটার নদী পুনঃখননের কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, বগুড়া জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে নদীর পুনঃখনন কাজের খননকৃত মাটির ২০ ভাগ নদী তীর সংলগ্ন জমির মালিকগণ প্রাপ্ত হয়েছে। বাকি ৮০ ভাগ মাটি নিলামে বিক্রি ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শহর অংশে ৭৩০ মিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ শেষ। সোলার লাইট বসানো হয়েছে। এখন ড্রেন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এরপর বসার বেঞ্চ, ছাতাসহ সৌন্দর্যবর্ধনের অবশিষ্ট কাজগুলো করা হবে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই নদীর সব কাজ শেষ হবে। সৌন্দর্যবর্ধন উপভোগ করতে পারবেন বগুড়াবাসী।
বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এসপি ব্রীজ পর্যন্ত ৭৩০ মিটার নদীর পুনঃখনন, স্লোপ প্রটেকশন, সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স হুমায়রা ফাহমিদা’ এর প্রোপ্রাইটর হুমায়ুন কবির জানান, শুরু থেকেই গুরুত্ব সহকারে কাজটি সঠিকভাবে করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত কাজের ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি চলতি জুন মাসের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন হবে।