স্টাফ রিপোটার্র : বগুড়ায় খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আতংকের জেলায় পরিণত হয়েছে বগুড়া। পুলিশ অধিকাংশ হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার এবং রহস্য উদঘাটনের দাবী করলেও খুন কোনভাবেই থামছে না। পুলিশের তথ্য মতে, গত ৭ বছরে জেলায় ৫৩৫ ব্যক্তি খুন হয়েছে যা প্রতি মাসে গড়ে খুনের সংখ্যা প্রায় ৮ জন।
জেলা পুলিশের তথ্য মতে, গত ২০১৬ সাল থেকে চলতি ২০২২ সাল পর্যন্ত জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ৫শ’ ৩৫ ব্যক্তি খুনের শিকার হয়েছেন। এসব খুনের অন্যতম কারণ হিসেবে রয়েছে, ডাকাতি, ছিনতাই, জমিজমা, পারিবারিক বিরোধ, চাঁদাবাজি, এলাকায় আধিপত্য, মাদক ব্যবসা, বালুর ব্যবসা। পরিসংখ্যানমতে, জেলায় ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৯ জন, ২০২১ সালের একই সময়ে ৮২ জন, ২০২০ সালে ৭৭ জন এবং চলতি ২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে ২১ মে পর্যন্ত ২৩জন খুন হয়েছেন। অধিকাংশ হত্যাকান্ডে ধারালো অস্ত্র হিসেবে বার্মিজ চাকু ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া রামদা, পিস্তুল, লাঠিসহ অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্প্রতি বগুড়া সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে কয়েকটি হত্যাকান্ড চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে বগুড়া সদর থানার সামনে ঈদের আগের রাতে গত ২১ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গাইবান্ধা সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজাউল করিম পান্নাকে এক যুবক চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে তাদের ৩ জনকে আহত করা হয়। এসময় হত্যাকারী কে পুলিশ আটক করে তার নিকট থেকে ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে। ঘাতক আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। ঈদুল ফিতরের পর দিন ২৩ এপ্রিল রাতে বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথাস্থ বগুড়া প্রধান ডাকঘরের নৈশ প্রহরীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার পর ভল্ট কেটে ৮লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনা ঘটে। নিহত নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিস সহায়ক (পিয়ন) প্রশান্ত আচায্যর্ (৫০) এর লাশ পর দিন সকালে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার একমাত্র আসামী হিসেবে নওগাঁ জেলার বাসিন্দা একজনকে গ্রেফতার করে এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ভল্ট কাটার মেশিন সহ অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ ও প্রায় ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে। এ ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ঈদুল ফিতরের দিন দুপুরে নন্দীগ্রামে কবরের মাটি সরানোকে কেন্দ্র করে চাচাতো ভাইদের মারধরে মো. রবিউল (২২) নামের এক যুবক নিহত হন। তিনি উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের মনিনাগ গ্রামের আকরাম হোসেনের ছেলে ও পেশায় একজন কৃষক ছিলেন।
গত ৬ মে ধুনটে শিশু শিক্ষার্থী রজনী আক্তার (৮) কে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। মামলার আসামী তিন কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বগুড়া শহরের মালগ্রামে ৯মে রাতের বেলা প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের শহর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ হোসেন (২৮)কে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা। সে মালগ্রাম কসাই পাড়ার মাছ বিক্রেতা ঝন্টু মিয়ার পুত্র বলে জানা গেছে। বালুর ব্যবসা নিয়ে বিরোধে স্থানীয় কয়েক যুবক তাকে প্রকাশ্যে খুন করে। পুলিশ এ মামলায় ৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
বগুড়া সদরের নামুজা ইউনিয়নের শাহপাড়ায় ১০ মে রাতে আব্দুর রাজ্জাক (৫৫) নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে আড়াই লক্ষ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। নিহত রাজ্জাক ওই গ্রামের মৃত নছির উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় হাটগুলোতে গরু কেনা—বেচা করতেন। রাত ৯টার দিকে বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পুলিশ এ মামলায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
জেলার শিবগঞ্জে সাইদুল ইসলাম (২৫) নামে এক ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার ২০মে উদ্ধার হয়েছে। শিবগঞ্জে উপজেলার কিচক ইউনিয়নের বেলাই মোলামগাড়ী মাঠ থেকে পুলিশ ওই লাশ উদ্ধার করে। সে শিবগঞ্জ উপজেলার বেলাই কারুন্ডা পাড়া গ্রামের শাহাদত হোসেন সাধোর ছেলে।
সর্বশেষ জেলার ধুনটে কাউসার আহম্মেদ মন্ডল (৩০) নামের এক কৃষি ফার্ম শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে ধুনট থানা পুলিশ। রবিবার সকালে উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের পেঁচিবাড়ী গ্রাম থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। সে ওই ইউনিয়নের বিলকাজুলি গ্রামের মোজদার হোসেনের ছেলে। রবিবার সকালে গাছের ডালের সাথে নাইলনের রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। তার মৃত্যু রহস্য জানা যায়নি।
বগুড়া জেলা অ্যাডভোকেটস বার সমিতির সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট সদরুল আনাম রন্জু বলেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হতে হবে আইন শৃংখলাবাহিনীকে। যারা খুনখারাবী করছে তাদের পিছনে হয়তো গডফাদার আছে। তাই এসব খুনীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া খুন কমবে না।
বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার বলেছেন, অধিকাংশ খুনের পেছনে আধিপত্য বিস্তার এবং ব্যক্তিগত বিরোধ রয়েছে। পুলিশ দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনছে। এ ছাড়া বার্মিজ চাকু ব্যবহার বন্ধে পুলিশ তল্লাশী করে চাকু উদ্ধার ও গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে।