গণ–অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আর ওই মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা) ছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলার শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে বিষয়টি তুলে ধরেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এ মামলায় শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে আরও দুই মাস সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২০ এপ্রিল প্রসিকিউশনকে (চিফ প্রসিকিউটরের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো.শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যেই জাতিসংঘ প্রতিবেদন (সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন) দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে এটি যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সারা দেশে সংঘটিত হয়েছে। তদন্ত সংস্থা এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে। সেখানে অনেক নতুন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। তৎকালীন সরকারের শীর্ষ ব৵ক্তিদের কল রেকর্ড রয়েছে। সেসবও হাজির করা হবে। সবকিছু তদন্তে না এলে অপূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সময় লাগবে। ট্রাইব্যুনালের কাছে তাঁরা দুই মাস সময়ের আবেদন করলেও এর চেয়ে কম সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, অসম্পন্ন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন না। সময় লাগলে আরও সময় নেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল দুই মাস সময় মঞ্জুর করেন।
গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনকে প্রথমে এক মাস সময় দেওয়া হয়। এরপর আরও দুই মাস সময় দেওয়া হয়। সেই হিসাবে প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারিত ছিল গতকাল। সবশেষে আরও দুই মাস সময় বৃদ্ধি করেন ট্রাইব্যুনাল।