বগুড়ায় ৯২ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান-চাল কিনবে সরকার

: তোফাজ্জল হোসেন
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

বগুড়া জেলায় অভ্যন্তরীণ বোরো ধান, চাল ও গম সংগ্রহ-২০২৫ শুরু হয়েছে। জেলা খাদ্য বিভাগ বগুড়ার আয়োজনে রোববার বেলা ১২ টায় শহরের চকসুত্রাপুরে সদর এলএসডিতে প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে ধান, চাল ও গম সংগ্রহের উদ্বোধন করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১২ উপজেলায় ৪৯ টাকা কেজি দরে ৮০ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ১২ হাজার ১৬৯ মেট্রিক টন ধান কিনবে সরকার। গত বোরো মৌসুমে ৩২ টাকা কেজি দরে ১১ হাজার ৬৫২ মেট্রিক টন ধান, ৪৬ টাকা কেজি দরে ৫৫ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে শতভাগ ধান সংগ্রহ হলেও চাল সংগ্রহ হয়েছিল ৯৪ দশমিক ২৬ ভাগ। সেক্ষেত্রে চলতি মৌসুমে ধানে কেজি প্রতি ৪ টাকা এবং চালে ৩ টাকা সংগ্রহ মুল্য বাড়ানো হয়েছে। একই সাথে গত বছরের চেয়ে এবার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও বেশি রয়েছে।

আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই অভ্যন্তরীণ বোরো ধান চাল ও গম সংগ্রহ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ১৫ মে পর্যন্ত খাদ্য বিভাগের সাথে মিলাররা চাল সরবরাহে চুক্তি করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিজিটাল চাল সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, দুপচাঁচিয়া ও আদমদিঘী উপজেলায় চাল সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া কৃষকের অ্যাপস এর মাধ্যমে সকল উপজেলায় ধান সংগ্রহ করা হবে।

এ মৌসুমে জেলায় সব থেকে বেশি শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৩৭৭ মেট্রিক টন ধান এবং আদমদিঘী উপজেলায় ১৮ হাজার ৮১২ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বগুড়া সদরে ৬৩৬ মেঃ টন ধান ও ১১ হাজার ৬৭৮ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, শাজাহানপুরে ৮৪৫ মেঃ টন ধান ও ৩ হাজার ২৬৯ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, শিবগঞ্জে ৩ হাজার ৭৭২ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, সোনাতলায় ৬৭৫ মেঃ টন ধান ও ২ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, গাবতলীতে ১ হাজার ২০৩ মেঃ টন ধান ও ২ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, সারিয়াকান্দিতে ৯৩৯ মেঃ টন ধান ও ১ হাজার ৪২২ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ধুনটে ১ হাজার ১০১ মেঃ টন ধান ও ১২৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, শেরপুরে ১ হাজার ৩৪৩ মেঃ টন ধান ও ১৮ হাজার ৬২৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, নন্দীগ্রামে ১ হাজার ২৭২ মেঃ টন ধান ও ১ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, কাহালুতে ১ হাজার ১৯২ মেঃ টন ধান ও ৩ হাজার ৩৭৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, দুপচাঁচিয়ায় ৭৭০ মেঃ টন ধান ও ১৩ হাজার ১৪৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং আদমদিঘী উপজেলায় ৮১৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে।

বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল কাবির খান বলেন, গত বোরো মৌসুমের চেয়ে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চালের সংগ্রহ মুল্য কিছুটা বেশি নির্ধারণ করেছে সরকার। আমরা আশা করছি, সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতায় চলতি বোরো মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

এর আগে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল কাবির খান এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, বোরো মৌসুমে ৪৯ টাকা দরে প্রতি কেজি চাল ও ৩৬ টাকা দরে প্রতি কেজি ধান কিনবে সরকার। সরকার যে ধান ও চালের দাম নির্ধারণ করেছেন, আমরা আশা করছি- এতে কৃষক উপকৃত হবেন। সেই সাথে মিল মালিকরাও স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের উৎপাদিত চাল গুদামে সরবরাহ করতে পারবেন। কৃষক এবং মিলার উভয়ে যাতে ন্যায্য মূল্য পায় সেদিক বিবেচনা করে সরকার ধান, চাল ও গমের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কৃষক যাতে গুদামে ধান নিয়ে এসে হয়রানি না হয় সেটি স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি ও খাদ্য বিভাগের কর্তকর্তাদের নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল ওয়াজেদ, জেলার সহকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ইউসুফ আলী, সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ হারুন-উর-রশিদ, বগুড়া সদর এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আতিকুল ইসলাম, বেতগাড়ী এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, নামুজা এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিত্য নন্দ পাল, জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হক, বগুড়া জেলা অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা রুনু, সদর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন সরকার, কিবিরিয়া অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া বাহার, তানভীর অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী কেতাউর রহমান, কৃষক রাসেল হোসাইন প্রমুখ।

বগুড়া সদর এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আতিকুল ইসলাম জানান, উদ্বোধনী দিনে বগুড়া পৌরসভার ২১নং ওয়ার্ডের কৃষক রাসেল হোসাইন ৩ মেট্রিক টন ধান বিক্রয় করেছেন। এছাড়া কিবিরিয়া অটো রাইস মিল ও তানভীর অটো রাইস মিল চাল সরবরাহ করেছে।