সরকারি চাকরির বিধি-নিষেধে হচ্ছে নতুন শাস্তি

: অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৭ ঘন্টা আগে

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বিপাকে পড়েন আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধাভোগী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা করতে দেখা গেছে।

সরকারি কর্মচারীরা দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে, দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে, তাদেরকে দ্রুত বরখাস্ত করার বিধান আনছে সরকার। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, এ ধরনের অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

জানা যায়, সংশোধিত আইনের খসড়া ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে চলা শাস্তিমূলক মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে এ সংশোধন আনা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে জনপ্রশাসনের একাংশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, একদল কর্মকর্তা দলবদ্ধভাবে জনপ্রশাসন সচিবকে অবরুদ্ধ করে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি আদায় করেছেন। প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। কেউ কেউ কর্মবিরতিতে গেছেন, কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন। এসব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মনে করছে, সরকারি চাকরিজীবীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে এবং আন্দোলন, সভা-সমাবেশ ও কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিকে নিরুৎসাহিত করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ প্রয়োজন রয়েছে। ফলে নতুন সংশোধিত আইনে সরকার সভা-সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি ও ধর্মঘটসহ যেকোনো ধরনের দলবদ্ধ কর্মসূচিকে শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এসব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তিতে পাঁচ বছর

বর্তমান প্রক্রিয়ায় কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গেলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, তদন্ত কমিটি গঠন, প্রতিবেদন দাখিল এবং মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ প্রশাসনিক ধাপে যেতে হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আপিল করার অধিকারও রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে নতুন আইনে এসব বাদ দিয়ে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান রাখা হচ্ছে।

নির্দিষ্ট সময়সীমা

নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, সরকারি দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে হবে। এরপর অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ ২০–২৫ কার্যদিবস সময় লাগবে। কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে জবাবদানের সময়সীমা শেষ হওয়ার দিন থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হবে। সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন। নতুন আইন অনুযায়ী, দাবি আদায়ে দলবদ্ধ কর্মসূচি, বলপ্রয়োগ, সভা-সমাবেশ, কর্মবিরতি—সবকিছুই শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে। কেউ এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে অন্যকে প্ররোচিত করলেও একই শাস্তির আওতায় পড়বেন। কর্মস্থলে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকলেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিধান রাখা হয়েছে। তবে আইনের এই খসড়া নিয়ে সরকার জনমত নেয়নি। সচরাচর আইন প্রণয়নের আগে মতামত আহ্বান করা হলেও এবার গোপনীয়ভাবে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।